মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা

ভূমিকা

বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একটি বলিষ্ঠ চেতনা, আত্মপ্রত্যয়ের দৃঢ় উচ্চারণ। প্রখ্যাত চিন্তাবিদ মনীষী সৈয়দ ইসমাইল হােসেন সিরাজী লিখেছেন- আলােক ব্যতীত যেমন পৃথিবী জাগে না, স্রোত ব্যতীত যেমন নদী টেকে না, স্বাধীনতা ব্যতীত তেমনি জাতি কখনাে বাঁচিতে পারে না।’ আমরাও সেই চিরন্তন সত্যের পথ ধরেই ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে অর্জন করেছি আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একদিকে যেমন করুণ, শােকাবহ, লােমহর্ষক, তেমনি ত্যাগের মহিমাব্যঞ্জিত ও বীরত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক সেই মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল যে বােধ বা চেতনাকে কেন্দ্র করে তারই নাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তাকে চির সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে আবহমান কাল ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রেরণা জোগাবে এ জাতিকে।

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি

স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা যে গৌরববোধ করি, এ গৌরব অর্জনের পেছনে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস বিদ্যমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি একদিনে সৃষ্টি হয় নি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পরও পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পায় নি। পরিবর্তন আসে নি বাঙালিদের জীবনে। ব্রিটিশের পর পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ।

তারা প্রথম আঘাত হানে বাঙালিদের মাতৃভাষার ওপর। সমগ্র পাকিস্তানে বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরও বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা করে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পশ্চিমা শাসকের একপেশে সিদ্ধান্ত আর বৈরী আচরণকে বাঙালিরা মেনে নিতে পারে নি। এর প্রতিবাদে তারা রাজপথে আসে। শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত হয়। ক্রমে ক্রমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন।

তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন খাজা নাজিমউদ্দীন। ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় এসে পূর্বসূরিদের অনুসরণে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর কথাই বললেন। ফলে ভাষা আন্দোলন আরও জোরদার হয়ে এক তুমুল গণআন্দোলনে রূপলাভ করে। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে মিছিল, মিটিং, শোভাযাত্রা ইত্যাদি নিষিদ্ধ করে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ছাত্র- জনতা তাও মেনে নেয় নি।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বাঙালি ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে রাজপথে নামে। মিছিলের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে নিহত হন রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতসহ আরও অনেকে। এ পথ ধরেই বাঙালিরা তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নামে। ১৯৬৯ সালে আবারও এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। এ পর্যায়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের পতনের পর ক্ষমতায় আসেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান। ক্ষমতায় আসার অল্পকালের মধ্যেই সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করলেন তিনি।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বাঙালিদের বিজয় হলেও ক্ষমতা দেওয়া হলো না। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শুরু হলো অসহযোগ আন্দোলন। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করতে থাকলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের দিকে। এদেশের মানুষের মনে দানা বেঁধে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ২৫ মার্চ রাতে ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চলে এবং ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা হওয়ার পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা

মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব ও চেতনার বিকাশ

বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগ থেকে যে চেতনা লাভ করেছে তা জাতির সকল আন্দোলনে প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। সমগ্র জাতি একতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এই যুদ্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ঐক্যবদ্ধ জাতি দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে তার পেছনে মুক্তিসংগ্রামের আত্মত্যাগ কাজ করেছে। অত্যাচার আর শােষণের কালাে হাত গুড়িয়ে দেওয়ার শক্তি ও প্রেরণা এসেছে এই স্বাধীনতার যুদ্ধ থেকে। বাংলাদেশের মানুষের স্বাজাত্যবােধের স্ফুরনের উৎস এই যুদ্ধ।

‘৭১ সাল দেশ ও জাতির নতুন ইতিহাসের জন্মদাতা। অধিকার আদায়ের জন্যে আত্মসচেতন হওয়ার প্রেরণা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। এই দিনগুলােতে মানুষ নতুন করে জেগে উঠেছিল। সে জাগ্রত চেতনা ছড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের পরবর্তী কর্মকাণ্ডে। গত আটত্রিশ বছর ধরে নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হয়েছে আমাদের সমাজজীবনে। ব্যক্তিস্বাধীনতা, নারীমুক্তি আন্দোলন, নারীশিক্ষা, গণশিক্ষা, সংবাদপত্রের ব্যাপক বিকাশ, সর্বোপরি গণতান্ত্রিক অধিকার চেতনা ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে সমাজে।

এরশাদ সরকারের নয় বছরে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যে প্রবল গণজোয়ারের মধ্য দিয়ে নবতর বিজয় অর্জন ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে তারও প্রেরণা জুগিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাহিত্যে বিশেষ করে কবিতা ও কথাসাহিত্যে এক নবতর সাহিত্যধারার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশে কবিতা চর্চা ও কথাসাহিত্য চর্চা আজকে যতটা ব্যাপ্তি, পেয়েছে তার পেছনে বড় প্রেরণা ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে গানে এবং নাটকে। গণসচেতনতামূলক বক্তব্যধর্মী নাটক ব্যাপকভাবে রচিত হয়েছে স্বাধীনতার পর। আমাদের দেশাত্মবােধক গানের ক্ষেত্রে এক নতুন জোয়ার এনেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অসংখ্য গীতিকার রচনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাথা তাদের গানে। তবে আমাদের চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আশানুরুপভাবে প্রতিফলিত হয় নি। খুব সামান্য সংখ্যক চলচ্চিত্রেই মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা প্রকাশ পেয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা

মুক্তির সগ্রাম ও স্বপ্নের বাংলাদেশ বনাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

প্রকৃত প্রস্তাবে শােষণহীন সমাজব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এদেশের সাধারণ মানুষ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থেকে সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ গড়ে তােলার স্বপ্নও তাদের সেদিন তাড়া করেছিল। তবে সে সময়ের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি। মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ’ নামের প্রত্রিকার ২১ নভেম্বর ১৯৭১ সংখ্যায় বলা হয়েছিল : “স্বাধীন বাংলাদেশের ছবিও সকল শ্রেণীর মানুষের মনে এক রকম নয়।

কৃষক ভাবিতেছে স্বাধীন বাংলাদেশে সে জমি পাইবে, সামন্তবাদী শােষণের নাগপাশ হইতে পাইবে মুক্তি। শ্রমিক ভাবিতেছে সে পাইবে বাঁচার মত মজুরি, কাজের নিরাপত্তা, রাজনৈতিক ও ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার। যুগ যুগ ধরিয়া সে সভ্যতার পিলসুজ হইয়া কাটাইয়াছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মধ্যদিয়া এমন এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দুয়ার খুলিয়া যাইবে সেখানে সে সভ্যতার নির্মাতা হিসাবে উহার ফল ভােগেরও অধিকারী হইবে। সকলের অন্ন, বত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আশ্রয়ের মতাে ন্যূনতম চাহিদাগুলি মিটিবে।”

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নেতা মোজাফফর আহমদ লিখেছিলেনঃ ‘কৃষকরা বলাবলি করিতেছে এবারে তারা জমি পাইবে, পাটের ন্যায্য মূল্য পাইবে, প্রতিদিনের প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিবে, ঘুস, রিশওয়াত ও অন্যান্য দুর্নীতির হাত হইতে মুক্তি পাইবে। শ্রমিক মনে করে যে তার বাঁচার মত ন্যায্য মজুরি পাইবে। ছাত্র ভাবে এবার তারা লেখাপড়ার সুযােগ পাইবে। যুবক মনে করে এবার তার চাকরির সংস্থান হইবে। এক কথায়, আজ এদেশের কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-শিক্ষক-বৃদ্ধ, নর-নারী, ডাক্তার-কবিরাজ-দোকানদার-ব্যবসায়ী, রিকশাওয়ালা-খেতমজুর আপামর জনসাধারণ ভাবিতেছে গরিব এবার মানুষের মতাে বাঁচিতে পারিবে, কথা বলিবার অধিকার পাইবে।’

বস্তুত শিক্ষা ও কর্মে গতিময় এক দেশের স্বপ্নে বিভাের মুক্তিযােদ্ধারাই এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান- এই স্বীকৃতি তারা পেতে চেয়েছিল। সবাই মিলে দেশ গড়ব, কৃষি ও শিল্প বিপ্লব ঘটাব, আত্মনির্ভর এক বাংলাদেশ গড়ে তুলব’- এই আকাঙ্ক্ষাই  ছিল আসলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কিন্তু আজ এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, এ চেতনাকে আমরা সঠিকভাবে আমাদের দেশ পরিচালনার মূলমন্ত্র করতে পারি নি। বরং কতিপয় লােভী এবং স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে সেই চেতনা হয়েছে ভূলুণ্ঠিত। যে স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সেই স্বপ্ন নানা কারণেই গত আটত্রিশ বছরেও সাফল্যের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারে নি

। স্বাধীনতার পর বারবার সামরিক অভ্যুত্থান, হত্যা আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরােধী দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের তৎপরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, যুবসমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা, বেকারত্ব, জনস্ফীতি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, ঘুস, দুর্নীতি ইত্যাদি অবক্ষয় স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিপন্ন করে চলেছে।

প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সভা, সমিতি, বিবৃতিতে বারবার যে কথাটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারণ করেছেন তা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার কথা। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরােধী কার্যকলাপ বারবার সংঘটিত হয়েছে প্রশাসনের ভেতরে এবং বাইরে। প্রকৃত মুক্তিযােদ্ধারা তাদের প্রাপ্য সম্মান এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন গত আটত্রিশ বছরে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা

সমাজ-বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

বাংলাদেশের মানুষের যে স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষার মানসে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয় নি। স্বাধীনতার পর বারবার সরকার বদল, হত্যা আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল, দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী তৎপরতা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, খুবসমাজে সৃষ্ট হতাশা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমাজে বাস্তবায়িত হতে দেয় নি।

সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আন্তরিক পদক্ষেপ। এ লক্ষ্যে দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণকর শাসনব্যবস্থা যেমন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত গৌরবগাথা আর আত্মত্যাগের সঠিক ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্যের কাছে তুলে ধরা। যে আদর্শ, উদ্দেশ্য ও চেতনা নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ তাদের তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে, ইজ্জত দিয়েছে হাজার হাজার মা-বোন, আমাদের সমাজ এবং জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের সেই আদর্শ ও চেতনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে-এটিই আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত।

উপসংহার

উপযুক্ত আলােচনায় এটা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালে আমরা যে কঠিন আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তখনি সাফল্যে উদ্ভাসিত হবে যখন রাজনৈতিক স্বাধীনতা আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতায় রূপান্তরিত হবে। সেই লক্ষ্যে আজ সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনাকে ছড়িয়ে দেয়া প্রয়ােজন। দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের মহৎ লক্ষ্যসমূহ জাগ্রত করা গেলে, তবেই আমাদের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এক গৌরবময় স্তরে উত্তীর্ণ হবে।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা

একুশে ফেব্রুয়ারি অনুচ্ছেদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top