একুশে ফেব্রুয়ারি অনুচ্ছেদ
প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি, সারা বিশ্বের মানুষ একত্রিত হয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করে। এই দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে কারণ এটি ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দেয় এবং প্রচার করে। ভাষা আমাদের পরিচয় এবং সংস্কৃতি গঠনে, আমাদের শিকড়ের সাথে সংযুক্ত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি সমস্ত ভাষা সংরক্ষণ ও প্রচারের গুরুত্বের একটি অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে, বিশেষ করে যেগুলি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য ও ইতিহাস
একুশে ফেব্রুয়ারি প্রতি বাঙালির জীবনে গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত দিন। ফেব্রুয়ারি মাসের আগমন আমাদের আবারো মনে করিয়ে দেয় একুশে ফেব্রুয়ারি কথা। ১৯৪৮ সালের পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন পাকিস্তানের একমাএ রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ছাএসমাজ বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে আন্দোলন শুরু করে।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার বাংলা তারিখ অনুযায়ী ৮ ফাল্গুন পাকিস্তান সরকারের ১৪৪ ধারা অমান্য করে ছাত্ররা ছাএরা রাজপথে আন্দোলন শুরু করলে পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে পুলিশ তাদের উপর গুলিবর্ষণ করে। এই গুলিবর্ষণ এ প্রাণ হারায় অনেক তরুণ ছাত্র। রফিক,জব্বার,বরকত,শফিউর,সালাম ও নাম না জানা অনেকে ১৯৫২ সালের এই আন্দোলনে প্রান হারায়। এরপর ১৯৫৬ সালের দিকে সংবিধানে বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন আনুষ্ঠানিক ভাবে পাকিস্তান সরকার।
এরপর ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর এক অধীবেশনে ১৮৮টি দেশের সম্মতিতে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন হয়ে আসছে যথাযথ মর্যাদায় ২০০১ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে সারা বিশ্বে। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পরিচিত। বাঙালির জাতীয় জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারি স্মৃতিবিজড়িত গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনায় প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে তাদের মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।
উপসংহার: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষাগত বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গুরুত্বের একটি শক্তিশালী অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে। এটি সেই ভাষাগুলিকে উদযাপন করার একটি দিন যা আমাদের ঐতিহ্যের সাথে আমাদের সংযুক্ত করে এবং আমাদের সম্মিলিত ভবিষ্যত গঠন করে। মাতৃভাষাগুলির তাৎপর্য স্বীকার করে এবং সক্রিয়ভাবে তাদের সংরক্ষণ ও প্রচারের মাধ্যমে, আমরা এমন একটি বিশ্ব নিশ্চিত করতে পারি যেখানে প্রতিটি ভাষা বিকাশ লাভ করে এবং প্রতিটি সংস্কৃতি লালিত হয়।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে এবং আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে এমন ভাষাগত টেপেস্ট্রি আলিঙ্গন করতে বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের সাথে যোগ দিন। আসুন আমরা সকল ভাষার সংরক্ষণ এবং প্রচারের জন্য একসাথে দাঁড়াই, এমন একটি বিশ্ব তৈরি করি যা ভাষাগত বৈচিত্র্যকে মূল্য দেয় এবং উদযাপন করে।
Pingback: বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কী কী | X FactOn